তাসের ঘরে তুমি আমি – পর্ব ১০

পর্ব 10

– আয়াশ রহমান

এমন নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে যে লাশ চেনা পর্যন্ত যাচ্ছে না। তবে যে হাতের টুকরা ছিল সেটার ডি এন এ টেস্টে এটা নিশ্চিত করা হয়েছে যে এটাই পুতুল।

শান পুলিশ স্টেশনে বসে আছে। তার ঠিক পাশেই তার দিকে তাকিয়ে আছে দুইজোড়া রক্তলাল চোখ, পুতুলের বাবা মায়ের। যে শশুর শাশুড়ী শানকে মাথায় তুলে রাখতো। বলত তাদের গরিব ঘরে রাজপুত্র জামাই হয়ে এসেছে, সেই দুইজন লোকই আজ খবর পেয়ে এসে শানকে জোড়ে থাপ্পড় দিয়েছে। অন্ধত্ব এর অভিনয় করা শানের চুপ চাপ সব সহ্য করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।

কিছু সময় আগের কথাঃ

সকালে পুতুলের লাশের এমন বিভৎস অবস্থা দেখে শানের মাথা যেন কাজ করছিল না। কি থেকে কি হয়ে গেল। আর সে কিচ্ছু ঠিক পেল না? ঘরেই তো এসব হয়েছে? শানের ঘুম খুব পাতলা। তবে আজ সে কেন কিছুই ঠিক পেল না সেটা নিয়ে বিস্ময় তার মনে। ঘরের ভিতরেই তো পুতুলকে এমনভাবে জবাই করা হয়েছে আর সে কিনা বেলকনিতে থেকেও কিছু করতে পারলো না?

নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে শানের। হাজার হোক বিশ্বাসঘাতক কিন্তু তার স্ত্রী ছিল, একসময় তাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবেসেছিল শান। কিন্তু আজ তার কাছে থেকেও সে তাকে রক্ষা করতে পারলো না। শানের মনে হচ্ছিল রাতে পুতুলের বলা শেষ কথা, একদিন সে পুতুলকে মিস করবে, সেই অসতী স্পর্শ মিস করবে। কিন্তু ব্যাপারটা এত তাড়াতাড়ি হবে সেটা ভাবতে পারেনি শান।

দরজা খুলে দেয়ার সাথে সাথে পুলিশ প্রবেশ করলো আগে। পিছনে মিথিলা। তার চোখে মুখে ভয়, কষ্ট। পুলিশ ভিতরে সবকিছু যাচাই করার পর শানকে ধরে এনেছে। মিথিলাও এসেছে শানের সাথে। সে সকাল থেকেই মাঝে মাঝে ফুফাচ্ছে। মিথিলা তো আর জানতো না শান বিবাহিত, তার স্ত্রীও আছে। তবে এরকম পরিস্থিতিতে জানবে সেটা কল্পনা করতে পারেনি। যে মিথিলা মামীর ভয়ে বাইরে বেড়োতেই

পুতুলের বাবা মাকে খবর দিলে তারা এসে থানায় পৌছেছে। এসেই শানকে মেয়ের খুনি বলে থাপ্পড়ও মেরেছে। সবাই ধারণা করছে সেই খুনি।
শান মাথা নিচু করে বসে আছে। সে কোনো হিসাবই মেলাতে পারছে না। মিথিলাও একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। সে আজ যেন খুব অসহায়। শানের মা বাবাকেও খবর দেয়া হয়েছে।

তখনই থানায় আসলো শানের অফিসের বস। তাকে অনেকেই চিনেন। তাকে দেখে অনেক পুলিশ অফিসাররাই এগিয়ে আসলো। সে এসেই শানের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
‘শানকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে?’
‘স্যার তার স্ত্রীর লাশ কাটা অবস্থায় তার সাথে বাসায় পাওয়া গেছে। তাই তাকেই প্রাথমিক পর্যায়ে সন্দেহের আওতায় আনা হয়েছে।’
‘আচ্ছা অফিসার, আপনি জানেন শান অন্ধ, আর অন্ধ মানুষকি এভাবে সূক্ষ্ম ভাবে লাশ কাটতে পারে? আর দ্বিতীয় প্রশ্ন সে লাশ কেটে আগুন লাগিয়ে নিজেই বসে থাকবে কেনো? লাশ গায়েব করতো অথবা নিজে পালিয়ে যেত।’
‘স্যার আপনার কথায় যুক্তি আছে কিন্তু তিনি তো চুপ আছেন।’
‘শান বলো কাল রাত থেকে কি কি হয়েছে।’
শান তার বসের কথা শুনে এবার বলা শুরু করলো কাল অফিস থেকে আসার পর কি কি হয়েছে সেই কাহিনী প্রসঙ্গে।

সব শুনে অফিসার বলল,’আপনার জবানবন্দি রাখলাম আমরা তবে আপনাকে ছাড়া যাচ্ছে না এখনি।’

শানের স্যার বলল,’ আচ্ছা তোমার কি কারো উপর সন্দেহ হয়?’
শান সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলল,’হ্যা আছে সন্দেহ আমার।’
মিথিলা এসব শুনছিল। এতক্ষনে সে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। ‘তাহলে শান তার স্ত্রীর খুনিকে চেনে?’

‘কে সে শান?’
‘তার নাম সাব্বির। আমি তার কথা পুতুলের অফিসে গিয়ে জেনেছি। পুতুলের অফিসের এক কলিগ তাকেই জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমি বিদেশে থাকাকালে তার সাথে পুতুলের সম্পর্ক হয়। দুইদিন আগে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য চোরাচালানের অভিযোগে৷ আমি শুনেছি তার সাথে আমার স্ত্রীর ঝগড়া কিন্তু অন্ধ মানুষ হয়ে কি করার আছে আমার নিরূপায় হয়ে থাকা ছাড়া?’

পুতুলের মা বাবা ঐদিকে আরো রেগে গেলো৷ ‘আমার মেয়েকে মেরে এখন আবার তার নামে বদনাম দিচ্ছিস?’

এর মধ্যে শানের মা বাবাও হন্ত দন্ত হয়ে প্রবেশ করলো। শানের মা শানকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো।
পুলিশ তাদের থামালো।

সবাইকে বাইরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হল। শানের মা বাবাকে শান অভয় দিয়ে বাসায় পাঠালো৷ মিথিলা না চাইতেও চলে গেল। শানের বসের অনুরোধে কথার সত্যতা যাচাই করার জন্য তখনই পুতুলের সাবেক অফিস ও সাব্বিরকে নিয়ে আসতে যাওয়া হল।

পুতুলের অফিসের সেই কলিগ এসে শানকে চিনতে পেরে বলল ইনি এসেছিলেন। আর পুতুলের সাথে সাব্বিরের কথাও বলল।

এবার সাব্বিরের আসার অপেক্ষা। পুলিশ তাকে খুজতে বেরিয়েছে। তখনই থানায় ডিআইজি সাহেব আসলেন। তিনিও শানের বসকে চিনতেন। তারা কথা বলা কালেই শানের বস তাকে পরিচয় করিয়ে দিল ডিআইজি সাহেবের সাথে।
‘কিহ তুমি সেই আরজে শান?’
ডিআইজি সাহেব শানের পরিচয় শুনে বললেন।
‘তুমি জানো আমার পুরো পরিবার তোমার শো দেখে, কিন্তু এসব কি হল বাবা?’
সব শোনার পর তিনি বললেন,’হুম, কিন্তু তুমি সেসময় ঘরে উপস্থিত ছিলে আর একজন মানুষকে এতটা যন্ত্রণা দিয়ে মারলে চিৎকার তো করবে, সেটাও তুমি শোনোনি?’
শান বলল সে ঘুমিয়ে ছিল আর আশ্চর্যজনক ভাবে তার একটু ঘুমও ভাঙেনি যদিও তার ঘুম পাতলা।

এরই মধ্যে পুলিশ এসে জানিয়েছে সাব্বিরকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না আর তার মোবাইলও বন্ধ। সাব্বির গত কালই জামিন নিয়েছে আর জামিনের শর্ত মোতাবেক তার সব সময় শহরের মধ্যে এবং যোগাযোগ এর আওতায় থাকার কথা ছিল। সে সেটা ভঙ্গ করেছে। আবার পুলিশ এটাও বের করলো যে সাব্বিরকে যেদিন হাতে নাতে ধরা হয়েছিল সেদিন সিসিটিভি ক্যামেরায় পুতুলকে তার কাছে যেতে দেখা গেছে এবং তার হাতে সেই ব্যাগ ছিল যেটায় ড্রাগস পাওয়া গেছে। সাব্বিরের পুতুলকে মারার কারনও পরিষ্কার হয়ে গেল।

সবার কাছে সব কিছু শোনার পর শানের উপর থেকে অনেকটাই সন্দেহ সরে সাব্বিরের উপর পড়েছে।

শানের বস বলল শানকে কি জামিন দেয়া যাবে এখনই। ডিআইজি সাহেব প্রথমেই শানের অন্ধত্ব দেখেই ভেবে নিয়েছিল শানের মত একজন চোখে না দেখতে পাওয়া লোকের এরকমভাবে মারতে পারার কথা নয়। তারপরও ফরমালিটি পূরণ করে
জামিনের ব্যবস্থা করা হল শানের।

বাড়িতে পৌছতে অনেক সময় লেগে গেলো শানের। আসার সময় পুতুলের মা বাবাকে থানায় বসে থাকতেই দেখেছে সে।

শানের বস শানকে বাড়ি দিয়ে গেল। রাত প্রায় দশটা বেজে গেছে। বসকে বিদায় দিয়ে লাঠির সাহায্যে সদর দরজার কাছে গিয়ে খুলতেই ভিতরে যা দেখলো তাতে শানের চোখ ছানাবড়া। এ কি দেখছে সে???

চলবে

346 Views
Share this Post :
Jahid Farahan
Jahid Farahan

Life style travel filmmaker.

Articles: 332
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments