গার্লফ্রেন্ড এর বোন যখন বউ – পর্ব 02

রিয়াদ চৌধুরীঃ

ফারিয়া গিয়ে দরজা খুলে দিল।কিন্তুু দরজার বাহিরে যে দাড়িয়ে ছিল সে হয়ত এইটা আসা করে নি।

আমাদের দুইজনকে একসাথে রুমে দেখে তানিয়ার মুখটা নিমিশেই ফ্যাকাসে হয়ে গেল।সে হয়ত আমাদের একসাথে দেখে অনেক কষ্ট পেয়েছে।যেটা তার চেহারা দেখালেই বোজা যাচ্ছে।

– কি হয়েছে, এইভাবে দরজা ধাক্কাচ্ছিস কেন?

 

– কিছু না আপু এইভাবেই।

– কিছু না হলে য এইখানে থেকে।দেখছিস না আমরা দুইজন জরুরি কথা বলছি।

– আচ্ছা।

এইটা বলে তানিয়া সেখান থেকে নিচে চলে গেলো।আর ফারিয়া দরজা লাগিয়ে দিয়ে আবার আমাকে জড়িয়ে ধরলো।তানিয়া যাওয়ার সময় আমি লক্ষ্য করছিলাম তার চোখের কোন পানি জমে গেছে।

ফারিয়া আমার সাথে আর একটু কথা বলে বাহিরে চলে গেলো।রাত হয়ে গেল কিন্তুু এখনও তানিয়া একবার এর জন্যও রুমে আসে নি।রাতে খাবারের জন্য ফারিয়া আমাকে ডেকে গেলো।আমিও নিচে গেলাম খাবার খেতে।তানিয়া তখন চুপ চাপ খাবার এর দিকে তাকিয়ে শুধু নারা চারা করছিল।আমি বেশ বুঝতে পারছি কেনো সে এইরকম করছে।কিন্তুু তাতে আমার কি।আমি তো আমার ভালোবাসার মানুষের সাথে ছিলাম।

খাবার খেয়ে রুমে এসে শুয়ে আছি। কিছু সময় পর তানিয়া আসলো।এসে কোনো কথা না বলে একটা বালিশ আর কাথা নিয়ে সোফার দিকে যাচ্ছিল।তখন আমি ডাক দিলাম।

– আপনি সোফায় ঘুমাচ্ছেন কেন?

– আপনি তো আমাকে আপনার সাথে ঘুমানোর অনুমতি দেন নি।

– আমি সেটা বলি নি।আপনি বিছানায় ঘুমান আমি সোফায় ঘুমিয়ে পড়বো।

– নাহ থাক আপনার কষ্ট করতে হবে না।আমি সোফায় ঠিক আছি।

– আপনাকে একবার বললাম না আপনি বিছানায় ঘুমান।(একটু ধমক দিয়ে বললাম)

তারপর আমি সোফায় ঘুমিয়ে পরলাম।আর মাহিমা বিছানায় ঘুমিয়ে গেলো।মাঝরাতে কারো কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো।একটু উঠে দেখি তানিয়া কান্না করছে।এইটা দেখে আমার তখন অনেক খারাপ লাগলো।কিন্তুু পরে চিন্তা করলাম কান্না করলে করুক তাতে আমার কি।আমিও সেই দিকে না তাকিয়ে আবার ঘুমিয়ে পরলাম।

সকালে করো মিষ্টি ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো।চোখ খুলে দেখি তানিয়া আমাকে ডাকছে।তানিয়া কে আগে কখনো এইভাবে দেখি নি।কিন্তুু আজকে তার দিকে লক্ষ্য করলাম। মেয়েটা আসলে অনেক মায়াবী।দেখতে অনেক ফর্সা।যাকে বলে দুধে আলতো।চোখ দুটো নীল রঙের।অনেক সুন্দর।আর চেহারায় অনেক মায়া ভরা।তার এই রূপ দেখে অনেক ছেলে পাগল হওয়ার উপক্রম।

তার ডাকে বাস্তবে ফিরলাম।

– এইযে উঠেন।আম্মু আমাদের নিচে ডাকছে।

– আচ্ছা আপনি যান।আমি আসছি।

এইটা বলে আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।বের হয়ে দেখি তানিয়া এখনও রুমে বসে আছে।তাই আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

– কি হলো বসে আছেন কেন?নিচে যাবেন না?

– আপনার জন্যই বসে ছিলাম।

– আচ্ছা চলুন।

দুইজন নিচে গিয়ে টেবিলে পাশাপাশি বসলাম।আমার সামনে মেহের বসে ছিল।খাবার সময় মেহের আমার পায়ে বার বার স্লাইড করছিল।যার কারণে খাবার খেতে আমার একটু প্রবলেম হচ্ছিল।হটাৎ ফারিয়া আমার পা মনে করে তানিয়ার পায়ে স্লাইড করতে লাগলো।তানিয়া বুজে গেছে যে ফারিয়া আমার পা মনে করে তার সাথে এমন করছে।তাই সে ফারিয়ার পায়ে জোরে একটা লাথি মারলো।আর ফারিয়া আসতে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো।

– কি হয়েছে ফারিয়া এইভাবে চিৎকার দিকে কেন?

– কিছু না বাবা মশা ছিল।(আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে)

– আচ্ছা এখন খাও।

খাওয়া দাওয়া করে রুমে বসে আছি।তানিয়া আসলো।

– ব্যাগ গুছিয়ে নিন।একটু পর চলে যাবো ..

– আর কিছু দিন থেকে যেতাম।

– আমি তো আপনাকে থাকতে না বলি নি।আপনি চাইলে থাকেন।

– আমি বলছিলাম যে আপনিও আমার সাথে থাকেন।(তানিয়া নরম স্বরে বললো)

– আমি এইখানে আসার আগেই আপনাকে বলেছি যে আমি আজকে চলে জাই।তাও আপনি বার বার এক কথা বলছে।

– আচ্ছা।আপনি যখন থাকবেন না তাহলেও আমারও থাকার ইচ্ছে নেই।

তারপর সব গুছিয়ে নিয়ে দুপুরে সেখান থেকে বাসায় চলে আসলাম।আমাদের বাসায় আসতে দেখে আম্মু আমাদের কাছে এসে বললো।

– কিরে রিয়াদ, তোরা আজকেই দেখি চলে আসলি?(আম্মু)

– অফিসে একটু কাজ ছিল আম্মু তাই চলে আসলাম।

– আচ্ছা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আস আমি খাবার দিচ্ছি।

– আচ্ছা।

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে গেলাম।তারপর খাবার খেয়ে একটা ঘুম দিলাম।বিকেলে ঘুম থেকে উঠে বাইরে বের হতে যাবো তখন আম্মু ডাক দিল।

– হ্যাঁ আম্মু বলো?

– বলছিলাম কি বউমা একা একা বসে বোর হচ্ছে।তাই তাকে নিয়ে একটু বাইরে থেকে ঘুরে আস।

– আমি এখন পারবো না আম্মু।আমার একটু কাজ আছে।

– রাখ তোর কাজ।ওকে এখন নিয়ে যা নয়তো ভালো হবে না।

– বললাম না এখন নিয়ে যেতে পারবো না।

– তুই নিয়ে যাবি নাকি তোর বাবাকে আমি ফোন দিবো।

– সব বিষয়ে বাবকে কেনো বলতে হবে।

– এখন তুই বল বউমাকে নিয়ে যাবি নাকি আমি যাবো তোর বাবাকে ফোন দিতে।

– আরে আরে নিয়ে যাবি তো।ওকে রেডি হতে বলো।

আমি সোফায় বসে বসে ওয়েট করছি।না জানে কখন আসবে।ধুর আর ভালো লাগে না।যখন সোফা থেকে উঠতে যাবি তখন আমার সামনের দিকে চোখ গেল।এই আমি কাকে দেখছি।তানিয়া কে অনেক সুন্দর লাগছে।কালো শাড়ি গোলাপী লিপস্টিক আর সাথে ম্যাচিং করে এ্যারিং পড়ছে।কখন যে আমার সামনে এসে দাড়িয়েছে আমি জানি না।তার ডাকে বাস্তবে ফিরলাম।

– এইযে কি দেখছেন।

– তোমাকে…(আনমনে বলে দিছি)

– ওহ তাই….( একটু লজ্জা পেয়ে বলল)

– (আমার হুশ ফিরল) দেরি হয়ে যাচ্ছে।আমাদের যাওয়া উচিত

বাইরে এসে গাড়ি নিয়ে বের হলাম।গাড়ি চালাচ্ছি।আর মাঝে মাঝে মাহিমার দিকে আর চোখে তাকাচ্ছি।এইটা আমি কি করছি।আমি তো ফারিয়া কে ভালোবাসি।তাহলে তানিয়ার দিকে বার বার আমার চোখ যাচ্ছে কেনো।তারপর আমি গাড়ি চালানোর দিকে মন দিলাম।কিছু সময় পর একটা নদীর ধারে এসে থামলাম।নদীটা অনেক সুন্দর।

তানিয়া কে দেখে মনে হচ্ছে তার অনেক ভালো লাগছে এইখানে এসে।তারপর নদীর কিনারে একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলাম।তানিয়ার চুলগুলো বার বার আমার মুখে এসে বাড়ি খাচ্ছে।আর আমর ও একটা ভালো লাগা কাজ করছে।তার চুলের মাতাল করে দেওয়া গন্ধে আমি বার বার ডুবে যাচ্ছিলাম।তানিয়া এইটা দেখছি যে তার চুল বার বার আমার মুখে আসছে।তাই সে তার চুল গুলো বেঁধে রাখলো।

দুজনের মধ্যে নিরবতা কাজ করছে।হটাৎ নিরবতা ভেঙে তানিয়া বলে উঠলো,,,

– আমাকে কি আপনি সত্যি ছেরে দিবেন?

– হুম

– আমাকে কি আপনার সাথে রাখা যায় না।আমি কি আপনাকে অনেক বেশি বিরক্ত করি।

– সেটা না।কিন্তুু আমি আপনার বোনকে ভালোবাসি।আর আমি তাকে ঠকাতে পারবো না।আপনি যদি আপনার সাথে থাকেন ও তাও আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না।কারণ আমি তাকে নিজের মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি।

– ওহ আচ্ছা।(আসতে করে বললো)

– আচ্ছা চলুন এখন যাওয়া যাক।অনেক সময় হয়ে গেছে।

সেখান থেকে উঠে একটা কফি শপে চলে আসলাম।দুইজনে বসে কফি খাচ্ছি।

– আচ্ছা আমরা কি এই কতদিন বন্ধু হয়ে থাকতে পারি?

– (যেহেতু বন্ধু হতে চাচ্ছে তাহলে ঠিক আছে।)আচ্ছা আমি রাজি।

– আচ্ছা আপনার আর আপুর লাভ স্টোরি কি ভাবে শুরু হয়?

– আমি তখন বিবিএ থার্ড ইয়ারে পড়তাম।আর ফারিয়া অন্য ভার্সিটি থেকে টিসি নিয়ে আমাদের ভার্সিটি তে অ্যাডমিশন নিছিল।তাকে প্রথম দিন দেখার পর থেকে তাকে ভালো লেগে যায়।সে আর আমি একই ইয়ারে পড়তাম।তাই আমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্ব দিয়ে শুরু হয়।আমি জানতাম সেও আমাকে মনে মনে পছন্দ করে।কিন্তুু বলবে না।তাই আমিই বলে ফেললাম।কারণ আমি তাকে হারাতে চাই নি।আর সেই একসেপ্ট করে নিল।

– ওহ

– আপনি কাউকে কোনো সময় ভালোবাসেন নি?

– পড়া লেখায় শুধু মগ্ন ছিলাম।তাই প্রেম ভালোবাসার জন্য টাইম পাই নি।কিন্তুু চিন্তা ছিলো বিয়ের পর নিজের স্বামীকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসবো।কিন্তুু আমার কপালে হয়ত ভালোবাসা নামের জিনিস টা নেই।

– এইরকম বইলেন না।আপনিও ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে করে নিয়েন।

– দেখা যাক।

সেখান থেকে উঠে বাসায় চলে আসলাম।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে আছি।তারপর খাবার এর সময় হলে খাবার খেয়ে রুমে এসে ফারিয়া কে ফোন দিলাম।কারণ আজকে তার সাথে কথা হয় নি।দুইবার কল দিলাম ধরলো না।তৃতীয় বার ফোন রিসিভ করলো।

1,770 Views
Jahid Farahan

Jahid Farahan

আমি ভুল করে কাঁদি ভুলে বাধি ঘর, আমার সমস্ত ভুলের ত, আমিই কারিগর

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments