রিয়াদ চৌধুরীঃ
ফোনের ওপাশ থেকে যা বললো সেটা শুনার পর মনে হচ্ছিল আমার পুরো দুনিয়া ঘুরছে।আমি জলদি করে বাসা থেকে বের হয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
হসপিটালে গেলাম ডাক্তার আমাকে একটা ক্যাবিনে নিয়ে গেলো।আমি ক্যাবিনের ভিতরে ঢুকার পর বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।
কারণ সামনে আমার আম্মুর লাশটা সাদা কাফন দিয়ে ডাকা।বেশি কষ্ট নাকি মানুষের চোখ দিয়ে পানিও বের হয় না। আমারও একই রকম।আমি যেনো পাথর হয়ে গিয়েছি।
– মিস্টার রিয়াদ আপনি নিজে শক্ত হোন।কারণ আপনার বোনের অবস্থা অনেক খারাপ।(ডাক্তার)
– (বোনের কথা শুনে আমি বাস্তবে ফিরে আসলাম) বোন হ্যা,,, হ্যা,,, কোথায় আমার বোন।তার কি হয়েছে ডাক্তার প্লিজ আমাকে বলুন প্লিজ।(আমি)
– আপনি আগে শান্ত হন।আপনার মা আর বোনের অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিলো।আপনার মা সেখানেই মারা যান।কিন্তুু আপনার বোন বেঁচে আছে।এখন আপনার বোনের আমাদের অপারেশন করতে হবে।২ ঘণ্টার মধ্যে তার অপারেশন না করলে তাকেও বাঁচানো যাবে না।(ডাক্তার)
– তাহলে আপনি এইখানে কি করছে।জলদি অপারেশন করুন।আর প্লিজ আমার বোনকে আপনি বাঁচান ডাক্তার।(আমি)
– আপনাকে আগে ৫ লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে।তারপর আমরা অপারেশন করবো।(ডাক্তার)
– আমি জলদি টাকা জমা দিচ্ছি।আপনি অপারেশন শুরু করুন।(আমি)
আমি হসপিটাল থেকে বের হয়ে জলদি করে এটিএম বুথে গেলাম।কিন্তুু কার্ডে দেখাচ্ছে টাকা নেই।আমি অবাক হয়ে গেলাম।কারণ আম্মু আমার কার্ডে সব সময় টাকা দিয়ে রাখে।তাহলে নেই কেনো।
আমি জলদি করে ব্যাংকে চলে গেলাম।কিন্তুু সেখানে গিয়েও দেখলাম একাউন্টে টাকা নেই।
– টাকা নেই মনে।আপনি ভালো করে চেক করুন।আপনার কোথাও হয়ত ভুল হচ্ছে।(আমি)
– (আবার চেক করতে লাগলো) সরি স্যার কিন্তুু আপনার একাউন্টে একটি টাকাও নেই।(ব্যাংকার)
এইটা কি হচ্ছে।আমার মাথায় আসছে না।টাকা কোথায় গেলো।নাহ আমার যা করার জলদি করতে হবে।আর ১ ঘন্টা আছেন।হটাৎ আমার ম্যানেজারের কথা মনে হলো আমি জলদি করে ম্যানেজার কে ফোন দিলাম।কারণ ম্যানেজার আমাদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ড।
– হ্যালো আঙ্কেল আমি রিয়াদ বলছি।(আমি)
– হ্যা বাবা বলো।আর তুমি দেশে কখন আসলা।(ম্যানেজার)
– আঙ্কেল এইগুলো পড়ে বলবো এখন আমার আপনার হেল্প দরকার।(আমি)
– হ্যা বলো, কি হেল্প লাগবে।(ম্যানেজার)
– আঙ্কেল আমার এখনই ৫ লক্ষ টাকা লাগবে।(আমি)
– কেন বাবা কি হয়েছে।(ম্যানেজার)
– আঙ্কেল আম্মু আর মিম অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।আর আমি যখন ব্যাংকে আসলাম টাকা নেওয়ার জন্য তখন তারা বলছে আমার একাউন্টে টাকা নেই।আঙ্কেল আপনি প্লিজ আপনাকে টাকা টা পাঠিয়ে দিন।নাহলে আমার বোন বাঁচবে না।(আমি)
– আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না।আমি এখনি পাঠিয়ে দিচ্ছি।(ম্যানেজার)
কিছুক্ষন পর ম্যানেজার টাকা পাঠিয়ে দিল।আমি জলদি করে টাকা উইড্রো করে হসপিটালে নিয়ে জমা দিলাম।
_________
অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে বসে আছি।১ ঘন্টা ধরে মিমের অপারেশন শুরু হয়েছে।আমি শুধু আল্লাহকে ডাকছি।যেনো আমার বোনটাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে না নিয়ে যায়।হটাৎ কাধে কেউ হাত রাখলো।
উপরে তাকিয়ে দেখি ম্যানেজার আঙ্কেল।আমি তাকে দেখে জড়িয়ে ধরলাম।
– কি হয়েছে রিয়াদ।আর হটাৎ এইসব কিভাবে হলো?(আঙ্কেল)
– আঙ্কেল আম্মু আর তাহা ঢাকায় আসছিলো।তখন তাদের কার অ্যাকসিডেন্ট করে।সেখান থেকে মিম বেঁচে গিয়েছিল।কিন্তুু আম্মু,,,, আম্মু বেঁচে ফিরতে পারেন নি।(বলেই কান্না করতে লাগলাম)
– এখন তোমার আম্মু কোথায় আছেন?(আঙ্কেল)
– আম্মুকে মর্গে রেখেছে।(আমি)
– দেখো যত জলদি পরো তোমার আম্মুর দাফন টা সেরে ফেলো।কারণ বেশি সময় তোমার আম্মুর বডিটা এইভাবে রাখা ঠিক হবে না।(আঙ্কেল)
– কিন্তুু আঙ্কেল, মিমকে না দেখিয়ে আম্মুকে কি করে দাফন করবো।(আমি)
– এখন এইসব বলার সময় নেই।কারণ মিম এখন অসুস্থ।আর তোমার আম্মুকে বেশি সময় মর্গে রাখা উচিত নয়।তাই জলদি করে দাফনের কাজ সেরে ফেলা উচিত।(আঙ্কেল)
– আচ্ছা ঠিক আছে।(আমি)
_________
আম্মুর জানাযার নামাজ শেষ করলাম।আমি আঙ্কেল আর হুজুর ও আরো অনেক মানুষ ছিল।আম্মুর জানাযার নামায শেষ হওয়ার পর আম্মুকে শেষ বারের মত দেখে নিলাম।১৫ বছর আম্মুর কাছ থেকে দূরে থাকলাম।আর এখন যখন আম্মুর কাছে আসলাম।তখন আম্মুই আমার থেকে দূরে চলে গেলো। আব্বুকেত অনেক আগেই হারিয়েছি।কিন্তুু এখন আম্মুকেও হারাবো এইটা আমি আসা করি নি।
তারপর আম্মুকে চিরো সময়ের জন্য মাটির নিচে শুয়ে দেওয়া হলো। বুকটা ছিড়ে কান্না আসছিল।কিন্তুু মিমের জন্য এখন থেকে আমাকে শক্ত হতে হবে।কারণ এখন এই দুনিয়ায় তাহাকে ছাড়া আমার কেউ নেই।আর মিমকে মানুষ করতে হবে।তাহলে আম্মু আমার উপর খুশি হবেন।
কবরস্থান থেকে হসপিটালে চলে আসলাম।সোজা ডাক্তারের কাছে চলে গেলাম।সে জানালো মিমকে রুমে সিফট করে হয়েছে।আর ৭ ঘন্টা পর তার জ্ঞান ফিরবে।
আমি গিয়ে মিমের পাশে বসে রইলাম।৭ ঘন্টা পর তাহা আস্তে আস্তে চোখ খুলতে লাগলো।
– ভাইয়া..।(আসতে করে বললো)
– বোন তুই ঠিক আছিস।কেমন লাগছে তোর এখন?(আমি)
– একটু মাথা মাথা ব্যাথা করছে।(মিম)
– আচ্ছা তুই কথা না বলে রেস্ট নে।(আমি)
– ভাইয়া আম্মু কোথায়?(মিম)
– আম্মু আছে।তুই একটু রেস্ট নে।(আমি)
– না ভাইয়া আম্মু কোথায় বলো না।আমি আম্মুকে দেখবো।(মিম)
– মিম জেদ করিস না বোন।তুই আগে সুস্থ হয়ে নে।তারপর তোকে আম্মুর কাছে নিয়ে যাবো।(আমি)
– ভাইয়া তুমি নিজে বলবে নাকি আমি নিজেই যাবো আম্মুর কাছে,,,(বলেই উঠতে লাগলো।)
– কি করছিস।তুই শুয়ে থাক প্লিজ।এখনই তুই অসুস্থ।(আমি)
– আমাকে আগে বলো আমি কোথায়।আমি আম্মুর কাছে যাবো।(মিম)
– আম্মু,,,,, আম্মু চলে গেছে।(আমি)
– চলে গেছে মনে।কোথায় গেছে ভাইয়া,,,,, বলো ন আম্মু কোথায়।(কান্না করতে লাগলো)
– আম্মু আমাদের ছেরে চলে গেছে।(আমি)
– ভাইয়া তুমি মিথ্যা বলছো তাই না।(মিম)
– আমি সত্যি বলছি বোন।আম্মু আর কখনো আমাদের কাছে ফিরে আসবে না।আম্মু চলে গেছে আমাদের ছেরে।(আমি)
– ভাইয়া আমি কি অনেক খারাপ।যে সবাই আমাকে ছেড়ে চলে যায়। আব্বুকেত অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছি।এখন আম্মুও আমাকে ছেড়ে চলে গেলো।তুইও কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবি নাকি?(মিম)
– না বোন।তুই খারাপ না তুই অনেক ভালো।আর আমি তোকে ছেরে কখনো যাবো না।তুই কান্না করিস না।নাহলে তুই আরো অসুস্থ হয়ে পড়বো।তুই একটু শুয়ে থাক।(আমি)
মিমকে বুজিয়ে শুয়ে দিলাম।১ সপ্তাহ পর মিমকে নিয়ে বাসায় আসলাম।